নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। জমি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধের জেরে ৬৮ বছর বয়সী এক মা নিজ বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেননি। বাড়ির মূল ফটকে ঝুলে থাকা তালা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য।
এই মায়ের নাম বিলকিস আক্তার। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। স্বামী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। জীবনের শেষ সময়ে তিনি স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে শান্তিতে থাকতে চাইলেও তার একমাত্র ছেলে তাকে সেই অধিকার দিতে নারাজ।
ঘটনার পটভূমি:
প্রায় ৩০ বছর আগে বিলকিস আক্তারের স্বামী কাজীর মোড় এলাকায় একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। মৃত্যুর পর, আইন অনুযায়ী স্ত্রী ও সন্তানদের মাঝে সম্পত্তির মালিকানা ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম পুরো জমি নিজের নামে চাইছেন।
বিলকিস আক্তার ও তার মেয়েরা এতে রাজি হননি। তখন থেকেই বাড়িতে চলতে থাকে পারিবারিক কলহ।
২০২১ সাল থেকে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয় এবং মা প্রায় সময় বড় মেয়ের বাসায় থাকতে শুরু করেন।
তালা দেওয়া বাড়ি:
সোমবার সকালে (তারিখ দিন) বিলকিস আক্তার নিজের বাড়িতে ফিরে দেখেন, দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে লোহার গেট বসানো হয়েছে এবং তালা ঝুলছে। ছেলেকে ফোন করলে তিনি স্পষ্ট জানান, “তুই দুই আনার মালিক, পাথারে গিয়ে থাক, এই বাড়িতে তোর জায়গা হবে না।”
বিলকিস আক্তার বলেন, “আমি আমার স্বামীর বাড়িতে ঢুকতে চাই। আমার মেয়েরা তাদের অংশ লিখে দিয়েছে। এখন আমার মালিকানাই বেশি। তবু আমি বাড়ির নিচে গ্যারেজে বসে আছি, ছেলে তালা খুলছে না।”
আইনি অবস্থান ও পারিবারিক মন্তব্য:
বড় মেয়ের স্বামী, একজন চিকিৎসক বলেন, “আমার শ্যালক বহুবার শাশুড়িকে অপমান করেছে, এমনকি গায়ে হাতও তুলেছে। আদালতে মামলাও চলমান আছে। আমরা মায়ের পক্ষে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, “বর্তমানে কাগজে-কলমে বিলকিস আক্তার বাড়ির প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক, তবুও তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
মানসিক আঘাত ও মানবিকতা:
একজন বৃদ্ধা মা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যে সম্মান ও আশ্রয় পাওয়ার কথা, তা যেন হারিয়ে ফেলেছেন। সমাজ, আইন ও মানবিক মূল্যবোধ—এই তিনটি জায়গা থেকেই এই ঘটনাটি প্রশ্নবিদ্ধ।
নওগাঁর এই ঘটনা কেবল একটি পারিবারিক বিরোধ নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ট্র্যাজেডি। একজন মা তার নিজের ঘরে ফিরতে চাইলেও বাধা হচ্ছেন তার নিজের সন্তান। এই ঘটনাটি আইন, সমাজ ও পারিবারিক মূল্যবোধ—তিনটিকেই নাড়া দেয়।
0 Comments
আপনার মতামত দিন!