ইহুদিদের আজান কী?
"আজান" শব্দটি মূলত ইসলামের একটি পবিত্র আহ্বান, যার মাধ্যমে মুসলমানদের নামাজের জন্য ডাক দেওয়া হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিও—যেখানে দাবি করা হচ্ছে এটি “ইহুদিদের আজান”। এই ভিডিওতে আরবির মতো একধরনের ভাষায় ধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে, যা অনেকেই ইসলামের আজানের সঙ্গে তুলনা করছেন।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে: ইহুদিদের আদৌ কোনো আজান আছে কি না? যদি থেকে থাকে, তার অর্থ কী? এই রিপোর্টে আমরা বিষয়টি বিশ্লেষণ করব।
ইহুদিদের ধর্মীয় আহ্বান: শোফার
ইহুদি ধর্মে ইসলামের মতো "আজান" নেই। বরং তাদের ধর্মীয় আহ্বানের মাধ্যম হলো “শোফার” (shofar) নামক একটি বাশির মতো বাঁশি। এটি প্রধানত ইহুদিদের প্রধান উৎসব রোশ হাশানাহ ও ইয়োম কিপ্পুর উপলক্ষে বাজানো হয়। শোফারের আওয়াজ মূলত আত্মজাগরণ ও অনুশোচনার প্রতীক।
তাদের ধর্মীয় সমাবেশ বা উপাসনায় মাইকে ডেকে ডেকে আহ্বান করার রীতি নেই, যেমনটি মুসলমানদের আজানে রয়েছে।
তাহলে “ইহুদিদের আজান” বলছে কে?
সম্প্রতি ইউটিউব, টিকটক ও ফেসবুকে ভাইরাল একটি ভিডিওতে এক ধরনের “আজানের মতো” শব্দ শোনা যাচ্ছে। ভিডিওটির টাইটেলে লেখা হয়—“ইহুদিদের আজান শুনুন! মুসলমানদের কাছে গোপন সত্য প্রকাশ!” অনেকেই এটা দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।
যদিও প্রকৃতপক্ষে সেটি ইহুদিদের প্রার্থনার ভাষা (হিব্রু) তে একটি গান বা প্রার্থনার অংশ। কিছু ইসলামবিরোধী বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারকারীরা এটিকে “ইহুদিদের আজান” নামে চালানোর চেষ্টা করছে।
হিব্রু ভাষার আজান সাদৃশ্য: অনুবাদে কি মিল আছে?
যে প্রার্থনাটি “ইহুদিদের আজান” নামে ভাইরাল হয়েছে, সেটি হিব্রু ভাষায় গাওয়া একটি প্রাচীন প্রার্থনা। এতে বলা হচ্ছে:
"Shema Yisrael Adonai Eloheinu Adonai Echad"
(বাংলা অর্থ: “হে ইস্রায়েলের সন্তানগণ! শোনো, আমাদের ঈশ্বর প্রভু একজন।”)
এই বাক্যটি ইহুদিদের একটি অত্যন্ত পবিত্র ঘোষণা, অনেকটা ইসলামের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর মতই। তবে এটি কোনো “আজান” নয়, বরং দৈনিক প্রার্থনার অংশ।
মুসলিমদের ভুল ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি
যেহেতু কিছু শব্দ ইসলামের আজানের শব্দের সাথে মিল রয়েছে (যেমন: একত্ববাদের ঘোষণা), অনেকেই এটিকে আজানের সঙ্গে তুলনা করছেন। কিন্তু ইসলাম ও ইহুদি ধর্মের রীতিনীতিতে অনেক মৌলিক পার্থক্য আছে। ইসলামের আজান ৫ ওয়াক্ত নামাজের জন্য মসজিদের মিনার থেকে উচ্চারণ করা হয়। অপরদিকে, ইহুদিদের এই প্রার্থনা হয় ঘরোয়া বা সিনাগগে।
ভিডিও ভাইরালের উদ্দেশ্য কী?
অনেক ইসলামবিদ ও মিডিয়া বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ভিডিও ভাইরালের পেছনে থাকতে পারে তিনটি উদ্দেশ্য:
-
ধর্মীয় বিভ্রান্তি তৈরি করা
-
ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে তুলনা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করা
-
ইসলামবিদ্বেষী বা ইহুদিবিদ্বেষী প্রোপাগান্ডা ছড়ানো
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের উচিত সোশ্যাল মিডিয়ার এসব বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট যাচাই না করে বিশ্বাস না করা।
ইসলাম কী বলে?
ইসলামে স্পষ্ট বলা আছে—"তোমরা না জেনে কিছু বিশ্বাস করো না।" (সূরা ইসরা, আয়াত ৩৬)
অতএব, ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রচার, শেয়ার বা বিশ্বাস করা সম্পূর্ণরূপে অনুচিত।
বিশেষজ্ঞ মতামত
ধর্মীয় গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কায়সার হামিদ বলেন,
“ইহুদিদের প্রার্থনার শব্দকে আজান বলা একেবারে ভুল। ধর্মীয় শব্দ ও রীতি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে।”
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে গুজব ও ভুয়া কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। “ইহুদিদের আজান” বলে যেটা ভাইরাল হয়েছে, সেটা আদৌ আজান নয়। বরং হিব্রু ভাষার ধর্মীয় প্রার্থনা। আমাদের উচিত সব ধরনের কনটেন্ট যাচাই করে দেখা এবং বিভ্রান্তি এড়ানো।
সারাংশ:
-
ইহুদিদের আজান নেই, তাদের প্রার্থনায় “শোফার” ব্যবহার হয়।
-
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ইহুদিদের একটি প্রার্থনার অংশ মাত্র।
-
ইসলামের আজানের সঙ্গে এর কোনো বাস্তবিক মিল নেই।
-
সোশ্যাল মিডিয়ার বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট থেকে সাবধান থাকা উচিত
0 Comments
আপনার মতামত দিন!