বলিউড জগতের উজ্জ্বল নাম জনি লিভার। তাঁর মেয়ে জেমি লিভারও নিজস্ব প্রতিভা ও কমেডির মাধ্যমে বিনোদন দুনিয়ায় নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে চমকে দিয়েছেন। একটি আন্তর্জাতিক প্রজেক্টের অডিশনের নামে তাঁকে ভিডিও কলে নগ্ন হতে বলা হয়েছিল! এই অভিজ্ঞতা তাঁর মতো একজন শিল্পীর জন্য যেমন অপমানজনক, তেমনি অন্য অনেক নবীন শিল্পীর জন্যও একটি সতর্কবার্তা।
ঘটনা শুরু হয় ‘আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট’ দিয়ে
জেমি লিভার একটি সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি খুবই উত্তেজিত ছিলেন কারণ প্রস্তাবটি এসেছিল একটি আন্তর্জাতিক সিনেমার অডিশনের জন্য। স্ক্রিপ্ট দেওয়া হয়নি, বরং বলা হয় ইম্প্রোভাইজ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে একটি লিঙ্ক পাঠানো হয় এবং বলা হয় যে পরিচালক সরাসরি ভিডিও কলে যুক্ত হবেন। কিন্তু ভিডিও কলে যিনি যুক্ত ছিলেন, তিনি নিজেকে পরিচালক পরিচয় দিলেও নিজের ভিডিও বন্ধ রেখেই কথা বলছিলেন।
“ভাবুন সামনে ৫০ বছরের একজন পুরুষ বসে আছেন…”
ভিডিও কলে কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি জেমিকে বলেন, “চরিত্রটা খুবই বোল্ড। আপনাকে একজন ৫০ বছর বয়সী পুরুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। শেষে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যও রয়েছে।” জেমি প্রথমেই অনুরোধ করেন যে, তিনি স্ক্রিপ্ট ছাড়া কিছু করতে চান না। তখন বলা হয়, “আপনাকে নগ্ন হতে হতে পারে। কিছু বলতে বা কিছু করতে হতে পারে। আপনি কি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?”
এই কথা শুনে জেমি সরাসরি জানিয়ে দেন, তিনি এমন কিছুতে স্বাচ্ছন্দ্য নন এবং ভিডিও কলটি সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেন। এরপরই তিনি বুঝতে পারেন, পুরো বিষয়টি আসলে একটি বড় ফাঁদ বা প্রতারণার অংশ হতে পারে কাস্টিং কাউচের ফাঁদে আরও কতজন?
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও উঠে আসে বলিউডে বহুল চর্চিত একটি শব্দ—"কাস্টিং কাউচ"। বহু প্রতিভাবান নারী-পুরুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন শুধু একটি সুযোগের আশায়। কেউ কেউ ভয়ে মুখ খোলেন না, কেউ কেউ বাধ্য হন চুপ থাকতে। জেমির মতো কেউ কেউ সাহস করে সামনে আসেন।
তিনি বলেন, “আমি একটু আবেগে ভেসে গেলে হয়তো বড় বিপদের মধ্যে পড়তে পারতাম। এমন অনেক নারী আছেন যারা এই ফাঁদে পা দিয়ে সর্বনাশের মুখোমুখি হয়েছেন। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।”
উপস্থিত বুদ্ধিই তাঁকে রক্ষা করেছে
জেমি স্বীকার করেন, ওই মুহূর্তে উপস্থিত বুদ্ধিই তাঁকে বাঁচিয়েছে। হয়তো আরও কেউ হলে লিঙ্কে ক্লিক করে কিছু এমন করে বসতেন, যা পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলের জন্য ব্যবহৃত হতে পারত।
তিনি বলেন, “আমি আগে থেকেই ভিডিও কল, স্ক্রিপ্ট ছাড়া অডিশন, বা কোনো লিঙ্কে ক্লিক করার বিষয়ে সতর্ক ছিলাম। কিন্তু এত বড় প্রজেক্টের নাম শুনে একটু হলেও দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম।”
বলিউড ও সুশৃঙ্খল অডিশন ব্যবস্থার প্রয়োজন
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও বোঝা যায়, বলিউডে একটি সুশৃঙ্খল এবং সুরক্ষিত অডিশন ব্যবস্থার প্রয়োজন কতটা জরুরি। প্রতিটি প্রজেক্ট, প্রযোজক বা পরিচালক যেন নিজেদের প্রামাণ্যতা প্রমাণ করতে বাধ্য হন। একেবারে নতুন বা মাঝারি পর্যায়ের শিল্পীরা যাতে সহজেই যাচাই করতে পারেন এই ধরনের প্রস্তাব আসল না নকল।
সাইবার অপরাধ ও প্রতারণার নতুন রূপ
এখনকার যুগে প্রতারণার ধরন বদলে গেছে। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ এনে দেয়, তেমনি ফাঁদও পাতে। অনলাইনে ভিডিও কলে নগ্নতা, স্ক্রিপ্ট ছাড়া ইম্প্রোভাইজেশন, অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করা—এসব আজকের দিনে ভয়ংকর বাস্তবতা। এমনকি বড় তারকাদের সন্তানরাও এর শিকার হতে পারেন।
সাইবার ক্রাইম ইউনিটগুলোর উচিত এই ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। জেমির ঘটনা শুধু একক অভিজ্ঞতা নয়, বরং হাজারো মানুষের বাস্তব ভয়।
জেমি লিভারের পরবর্তী কাজ
জেমি লিভার বলিউডের 'হাউসফুল ৪', 'ভূত পুলিশ', 'যাত্রিস', 'ক্র্যাক'—এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন। সামনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু করতে যাচ্ছেন তাঁর স্ট্যান্ড-আপ কমেডি ট্যুর—‘দ্য জেমি লিভার শো’। ১ আগস্ট সিয়াটল থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট বোস্টনে শেষ হবে এই সফর।
এছাড়াও সামাজিক মাধ্যমে জেমির উপস্থিতি শক্তিশালী। ইনস্টাগ্রামে তিনি তাঁর মজার ভিডিও, কমেডি স্কিট, পরিবার ও ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকেন।
পাঠকের জন্য বার্তা
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের সবার জন্যই রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা:
-
কখনো স্ক্রিপ্ট ছাড়া ভিডিও কল অডিশনে অংশ নেবেন না।
-
অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করার আগে ভাবুন।
-
প্রজেক্ট সম্পর্কে পুরো তথ্য না জানলে অংশ না নেওয়াই ভালো।
-
নিজের সীমা ও সম্মান সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
-
প্রয়োজন হলে আইনি পদক্ষেপ নিতে ভয় পাবেন না।
0 Comments
আপনার মতামত দিন!