Header Ads Widget

বদলে যাওয়া বাংলাদেশ: উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও তরুণ প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ

 



স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় পার করেছে বাংলাদেশ। এই সময়ের মধ্যে দেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগতভাবে অনেক এগিয়েছে। কিন্তু এই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে—গণতন্ত্রের অবস্থা কোথায় দাঁড়িয়ে? তরুণ প্রজন্ম কীভাবে এই পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে? এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো—এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের বাস্তবতা, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ।


🔷 উন্নয়নের বাস্তব চিত্র

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। গত এক দশকে:

  • জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬–৭% ধরে রেখেছে

  • দারিদ্র্য হার ৪০% থেকে কমে এসেছে ২০% এর নিচে

  • বিদ্যুৎ উৎপাদন, সড়ক যোগাযোগ, ডিজিটাল সেবা—সবক্ষেত্রে অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো

  • মহিলা শিক্ষার হার, প্রাথমিকে ভর্তি, স্বাস্থ্যসেবায় শিশু-মৃত্যুর হার কমে আসা—এইসবই ইতিবাচক দিক

তবে প্রশ্ন হলো—এই উন্নয়ন কি সবার কাছে পৌঁছেছে? না কি কিছু শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ?


🔷 গণতন্ত্র: নামে না বাস্তবে?

বাংলাদেশ সংবিধানে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলেও, বাস্তবে অনেক সময় গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে। আমরা দেখেছি:

  • বিরোধী দলের কণ্ঠ রোধ

  • নির্বাচনে বিতর্ক

  • মানবাধিকার লঙ্ঘন

  • সাংবাদিকদের হয়রানি

  • অনলাইন সেন্সরশিপ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার

গণতন্ত্র শুধু ভোটেই সীমাবদ্ধ নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগীয় স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং নাগরিক অংশগ্রহণ—এসবই গণতন্ত্রের ভিত্তি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে এই ভিত্তিগুলোকে শক্তিশালী করতেই হবে।


🔷 তরুণ প্রজন্ম: সুযোগ না প্রতিযোগিতা?

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ তরুণ। এটাই দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। কিন্তু—

  • বেকারত্ব: প্রতিবছর লাখ লাখ তরুণ শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থান সেই অনুপাতে বাড়ছে না।

  • স্কিল গ্যাপ: শিক্ষার মান ও বাস্তব দক্ষতার মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে। অনেকে চাকরি পাচ্ছেন না শুধু কারণ প্র্যাকটিক্যাল স্কিল নেই।

  • প্রবাহমান হতাশা: উচ্চ শিক্ষিত তরুণরাও দীর্ঘদিন বেকার থেকে হতাশ হয়ে যাচ্ছে, কেউ কেউ বিদেশে চলে যাচ্ছে, কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

তরুণরা যদি দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে না পারে, তাহলে এই উন্নয়ন টেকসই হবে না।


🔷 সোশ্যাল মিডিয়া ও সচেতনতা

আজকের তরুণ সমাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত সক্রিয়। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম—এসব প্ল্যাটফর্মে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দিচ্ছে। এর কিছু ইতিবাচক দিক আছে যেমন:

  • তথ্য পাওয়া সহজ

  • জনমত গঠন

  • প্রতিবাদ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত

কিন্তু নেতিবাচক দিকও কম নয়:

  • ভুয়া খবর ও গুজব

  • অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয়

  • সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিকশন

  • ব্যক্তিত্ব ও আচরণে পরিবর্তন

সোশ্যাল মিডিয়াকে কিভাবে ইতিবাচক কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজকে ভাবতে হবে।


🔷 শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন

বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কিছু মৌলিক সমস্যাও রয়ে গেছে:

  • নোট ও গাইড নির্ভরতা: সৃজনশীলতা কমে যাচ্ছে

  • মার্কস ভিত্তিক প্রতিযোগিতা: শেখার উদ্দেশ্য হয়ে গেছে শুধু ভাল গ্রেড

  • কারিগরি শিক্ষার ঘাটতি: চাকরি-ভিত্তিক স্কিল অর্জনের সুযোগ কম

নতুন প্রজন্মকে চাকরি খুঁজতে নয়, চাকরি তৈরি করতে শেখাতে হবে। এজন্য স্কুল-কলেজে “স্টার্টআপ সংস্কৃতি”, “স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স” এবং “ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম” চালু করা দরকার।


🔷 ডিজিটাল বাংলাদেশ: সুফল ও ঝুঁকি

বর্তমানে প্রায় সকল সরকারি-বেসরকারি সেবা অনলাইনে চলে এসেছে। “ডিজিটাল বাংলাদেশ” রূপকল্প অনেকটাই সফল। কিন্তু—

  • সাইবার অপরাধ বেড়ে গেছে

  • ডেটা সিকিউরিটি নিয়ে উদ্বেগ

  • অনলাইন প্রতারণা—নকল ফর্ম, ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন ইত্যাদি

ডিজিটাল সুবিধা নিতে হলে নাগরিকদের ডিজিটাল সেফটি সম্পর্কেও সচেতন করতে হবে।


🔷 নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সংকট

উন্নয়নের এই যুগে নৈতিক অবক্ষয়ও দ্রুত বাড়ছে:

  • শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, আত্মহত্যা

  • পরিবারে সহিংসতা

  • চুরিচামারি ও প্রতারণা

  • অল্প বয়সে প্রেম ও মাদকাসক্তি

শুধু আইন বা প্রযুক্তি নয়, আমাদের দরকার নৈতিক শিক্ষা, পারিবারিক বন্ধন এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের চর্চা।


🔷 করণীয় ও প্রস্তাবনা

১. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা – বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম
২. কারিগরি ও বাস্তবমুখী শিক্ষা প্রসার
৩. তরুণদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহ
৪. নাগরিক সাংবাদিকতা ও অনলাইন জবাবদিহিতা
৫. অনলাইন গুজব প্রতিরোধে ফ্যাক্টচেকিং উদ্যোগ
৬. পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক
৭. সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা


🔷 উপসংহার

বাংলাদেশ একটি পরিবর্তনের পথে। একদিকে উন্নয়ন, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ—এই দুইয়ের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য আনতে হলে প্রয়োজন গণতান্ত্রিক চর্চা, দক্ষ তরুণ সমাজ, শিক্ষা সংস্কার এবং নৈতিকতার পুনর্জাগরণ। একমাত্র সচেতন নাগরিক সমাজই পারে এই দেশকে একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক এবং উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে।

Post a Comment

0 Comments

//